আন্তর্জাতিক আইনের তোয়াক্কা না করে রোহিঙ্গাদের দিল্লি থেকে আন্দামান সমুদ্রে নিয়ে ছুঁড়ে ফেলার ঘটনায় তদন্ত শুরু করল রাষ্ট্রসংঘ বা ইউএনও। একই সঙ্গে তারা ভারত সরকারকে অনুরোধ করেছে, এ ধরনের ‘বিবেক-বর্জিত’ এবং ‘অমানবিক’ আচরণ থেকে বিরত থাকতে।
প্রসঙ্গত: বারবার আবেদন করা সত্ত্বেও ভারতের সুপ্রিম কোর্ট কিন্তু রোহিঙ্গাদের বিষয়ে ভারত সরকারের কাজকর্মে কোন ধরনের হস্তক্ষেপ করতে রাজি হয়নি। জুলাই মাসের শেষে রোহিঙ্গাদের মামলাগুলো একসঙ্গে শুনবে বলে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে।
রোহিঙ্গাদের আইনজীবী কলিন গঞ্জালভেজ এবং প্রশান্ত ভূষণ আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে ভারত সরকার আরও বহু রোহিঙ্গাকে দেশ থেকে বে-আইনিভাবে বিতারণ করবে।
তারা বলেছেন, ভারত সরকার আরও আট হাজার রোহিঙ্গাকে বিতারণ করতে চাচ্ছে। শুধু দিল্লিতেই এই ধরনের রোহিঙ্গার সংখ্যা ৮শ’ যাদেরকে ভারত তাড়িয়ে দিতে চাচ্ছে।
উল্লেখ্য, গুজরাট থেকে যে ২৪০ জন রোহিঙ্গা এবং বাংলাদেশীকে সুন্দরবনে বাঘের মুখে ছেড়ে দিয়ে আসা হয়েছে বলে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, সে বিষয়ে কোনো তরফে আর বিশেষ কোনো উচ্চবাচ্য দেখা যায়নি। ভারত সরকারের পক্ষ থেকে এ ঘটনা স্বীকার বা অস্বীকার করে কোনো বিবৃতি দেয়া হয়নি।
এদিকে ভারত সরকারের এহেন হীন কর্মকান্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর। সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা রঞ্জিত সুর বলেন, এ ঘটনা ভারতের সংবিধানের মানবাধিকার রীতি-নীতিকে লঙ্ঘন করে। রাষ্ট্র সংঘ তদন্ত করছে ভালো কথা। এর একটা সমাধান হওয়া দরকার।
প্রসঙ্গত: কোনো মানুষ যদি অন্য রাষ্ট্রে অনুপ্রবেশ করে তাহলে তাকে তার নিজের রাষ্ট্রে ফেরত দেওয়ার আইন আছে। আইনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সেই রাষ্ট্রকে স্বীকার করতে হয় যে, ওই ব্যক্তি তাদের দেশের নাগরিক এবং দুই দেশের মধ্যে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে তাদেরকে হস্তান্তর করা হয়।
পুশব্যাক কোনো আইনী প্রক্রিয়া নয়। এটা অমানবিক, বে-আইনি। তাই বাংলাদেশেই হোক বা আন্দামান সমুদ্রেই হোক, কোনো জায়গাতে কোনো মানুষকে, তা হোক সে যে দেশেরই নাগরিক, এভাবে ফেলে দেওয়া যায় না। এটা চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন।
অদ্ভুত ব্যাপার লক্ষণীয়, এ দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর তরফে এত বড় মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে কোনো প্রকার প্রতিক্রিয়া বা সমালোচনা আমরা দেখছি না।
কলিন গঞ্জালভেজ একটা সার কথা বলেছেন, এরা যে কোনো দেশেরই নাগরিক বা রোহিঙ্গা অথবা অন্য কিছু হলেও সেটা প্রধান নয়। এরা ধর্মে মুসলমান, এটাই তাদের অপরাধ। তাই ভারত সরকার তাদেরকে মাঝ সমুদ্রে নিয়ে ফেলে দেওয়ার মত ভয়ংকর আচরণ করছে। বিষয়টি সচেতনমহলের গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা উচিত বলেও তিনি মনে করেন।
খুলনা গেজেট/এমএনএস